দেশের এক কোটি মানুষ লিভার সিরোসিস আক্রান্তের ঝুঁকিতে


sohel Rana প্রকাশের সময় : জুন ৯, ২০২২, ১০:২৮ অপরাহ্ন / ৮৬
দেশের এক কোটি মানুষ লিভার সিরোসিস আক্রান্তের ঝুঁকিতে

বাংলাদেশে প্রতি তিন জনে এক জনের ফ্যাটি লিভার আছে।  প্রায় চার কোটি পঞ্চাশ লক্ষ মানুষ ফ্যাটি লিভারে ভুগছে। এর মধ্যে প্রায় এক কোটি মানুষ সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকিতে আছে।  অথচ প্রায় ক্ষেত্রে শুধুমাত্র খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার ধরন পরিবর্তন এবং ওজন কমানোর মাধ্যমে ফ্যাটি লিভার ও ন্যাশ প্রতিরোধ করা যায়

 

আজ বুধবার পঞ্চম আন্তর্জাতিক ন্যাশ দিবস উপলক্ষে ঢাকাস্থ সিরডাপ মিলনায়তনে একটি

বৈজ্ঞানিক সেমিনার ও সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইনে বক্তারা এ তথ্য দেন।

 

সেমিনারে জানানো হয়, লিভার রোগজনিত মৃত্যু বিশ্বব্যাপী মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসাবে পরিগণিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ২.৮২ % হচ্ছে লিভারের রোগের কারণে, বিশেষ করে সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের কারণে হয়ে থাকে।

 

লিভার সিরোসিস ও ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে লিভারে চর্বি জমাজনিত প্রদাহ। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে বলে স্টিয়াটো-হেপাটাইটিস। অতিরিক্ত চর্বি জমা হওয়ার কারণে যকৃতে যে প্রদাহ সৃস্টি হয় তাকেই স্টিয়াটো-হেপাটাইটিস বলা হয়।

 

ফ্যাটি লিভারের বিপদজনক পরিনতি হচ্ছে ন্যাশ। নির্ণয়হীন ও নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় ফ্যাটি লিভার বিপদজনকভাবে-এর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। লিভারে প্রদাহ সৃস্টি করা ছাড়াও যকৃতে চর্বি জমার আরো বেশ কিছু খারাপ দিক রয়েছে। এই রোগটি হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং শরীরে ইনসুলিন হরমোনের কার্যকারিতা কমে যাওয়ার সাথে সরাসরি সম্পর্কিত।

 

সারাবিশ্বের সাথে সাথে বাংলাদেশেও এ রোগের প্রাদুর্ভাব আশংকাজনক হারে বাড়ছে।

 

বক্তারা জানান, লিভারে প্রদাহ সৃস্টি করা ছাড়াও যকৃতে চর্বি জমার আরো বেশ কিছু খারাপ দিক রয়েছে। এই রোগটি হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং শরীরে ইনসুলিন হরমোনের কার্যকারিতা কমে যাওয়ার সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। সারাবিশ্বের সাথে সাথে বাংলাদেশেও এ রোগের প্রাদুর্ভাব আশংকাজনক হারে বাড়ছে।

অধ্যাপক মবিন খানের সভাপতিত্বে  সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল ডা. এ এস এম মতিউর রহমান এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ।

তাছাড়া বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট সাংবাদিক আমির খসরুসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকবৃন্দ।  তারা জানান, ফ্যাটি লিভার বিশ্বব্যাপী একটি উদ্বেগজনক জনস্বাস্থ্য সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এমনকি দীর্ঘমেয়াদী লিভার প্রদাহের কারণ হিসেবে ভাইরাসকে অতিক্রম করে ফ্যাটি লিভার প্রাধান্য বিস্তার করছে।

সেমিনারের শেষ অংশে কয়েকজন ভুক্তভোগী রোগি তাদের ভোগান্তি, রোগ যন্ত্রণা এবং কষ্টের কথা তুলে ধরেন। হেপাটোলজি সোসাইটি, ঢাকা কর্তৃক বাংলাদেশে ফ্যাটি লিভার রোগ প্রতিরোধে কর্মপন্থা নির্ধারনে ১১ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সুপারিশগুলো হলো- প্রত্যেক ব্যক্তির সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন এবং প্রতি দিন অন্তত ত্রিশ মিনিট করে হাঁটতে হবে;  দড়ি লাফ এবং সাইকেল চালানো শরীরচর্চার জন্য ভাল অপশন; দুধ, ফল, শাক-সবজি খাওয়া বাড়ানো এবং চিনিযুক্ত খাবার, পানীয়, চকলেট, আইসক্রিম, ফাস্ট ফুড এবং (ভাজা খাবার) ট্রান্স-ফ্যাটের পরিমাণ কমানোর মাধ্যমে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে ক্যালরি গ্রহণ কমাতে হবে ; শরীরচর্চা বাড়ানো যায় এ রকম পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

দেশের প্রতিটি স্কুল এবং প্রশাসনিক ওয়ার্ডে খেলার মাঠ রাখা বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং প্রতিটি শিশুকে খেলতে এবং অন্যান্য শারিরীক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের জন্য অনুপ্রাণিত করতে হবে; মেইন রোডের পাশে বাইসাইকেল চালানো এবং হাটার জন্য আলাদা লেন তৈরি করা, যা স্বাস্থ্য এবং অর্থনীতি উভয়ের জন্য উপকারী হবে; গণসচেতনতামূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে অধিক স্যাচুরেটেড ফ্যাট, চিনি এবং লবনযুক্ত জাংক ফুড এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার পরিহার করতে উৎসাহিত করতে হবে; প্রক্রিয়াজাত খাবারের পুষ্টিমান সঠিক রাখার জন্য (উদাহরণস্বরূপ, ট্রান্সফ্যাট, স্যাচুরেটেড ফ্যাট, চিনি এবং লবন পরিহার) খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইনের অধীনে আনতে হবে;

সফট ড্রিংক্সের পরিবর্তে ফ্রেস ফলের জুস এবং পানি পানকে উৎসাহিত করতে হবে। ছোট-বড় সবার জন্য পার্ক, খেলার মাঠ, স্কুল এবং কর্মস্থলে পরিস্কার পানির ব্যবস্থা করতে হবে; প্রক্রিয়াজাত খাবারের ক্ষেত্রে প্যাকেটের গায়ে পুষ্টিমান এবং শক্তিমান (ক্যালরি) উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক করতে হবে; সকল চিকিৎসককে ফ্যাটি লিভার সংক্রান্ত পর্যাপ্ত জ্ঞান দিতে হবে, এর ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন করতে হবে, এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্টির দিকে খেয়াল রাখতে হবে যাতে তারা ন্যাশের ঝুঁকিতে না পড়ে এবং  ব্যবহার ও প্রয়োগ কমানোর জন্য (চর্বি বা চিনি কর) ধার্য করার চিন্তা করা যেতে পারে।