সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ এক নিভৃতচারী দেশ বদলের রূপকার


sohel Rana প্রকাশের সময় : জুলাই ২৭, ২০২৩, ৩:৫৫ অপরাহ্ন /
সজীব ওয়াজেদ জয়ঃ এক নিভৃতচারী দেশ বদলের রূপকার

বিশেষ প্রতিবেদকঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, যিনি তার নানা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো একজন স্বপ্নদ্রষ্টা। তিনি দেশের মানুষের জন্য নীরবে কাজ করে যাচ্ছেন। আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে দেশের তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।

সজীব ওয়াজেদ জয় নামটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে দেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে বিজয়, এই নামটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নজয়, জড়িয়ে আছে দেশের বেকার যুবকদের ভাগ্য বদলের চিত্র। শুধু তাই নয়, এই নামটির সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে বাঙালি জাতির স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন।

সজীব ওয়াজেদ জয়ের অন্যতম পরিচয় হলো তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে। তিনি বাংলাদেশের আইসিটি পরামর্শক এবং মেধাবী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।

বাংলাদেশে তারুণ্যের নেতৃত্বের বিকাশ, তাদের স্বপ্ন দেখানো, তাদের কর্মসংস্থান, তারুণ্যে উদ্যোক্তা নির্মাণে উদ্বুদ্ধকরণ, প্রযুক্তি উন্নয়নে সহায়তাকরণ, শিল্পায়ন, গবেষণা ইত্যাদি বিষয়ে জয়ের বিজয়ের নানা গল্প রয়েছে। উন্নয়নশীল বিশ্বে তিনিই একমাত্র মেধাবী নেতা, যিনি বাংলাদেশকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন।

যে মানুষটি দেশের তথ্য ও প্রযুক্তিতে এত অবদান রেখেছেন; দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে অনবদ্য অবদান রেখে চলেছেন তার বেড়ে ওঠা কোথায় এবং কীভাবে; চলুন জেনে নেয়া যাক একনজরে:

১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন অবস্থায় জন্ম হয় জয়ের। বাবা খ্যাতনামা পরমাণু বিজ্ঞানী ওয়াজেদ মিয়া এবং মা শেখ হাসিনার প্রথম সন্তান তিনি। সোনার চামচ মুখে নিয়ে বেড়ে ওঠার কথা থাকলেও, জয়ের শৈশব ও কৈশোর বাকিদের মতো ছিল না। সংগ্রাম, আশ্রয় আর নানা বাধা ও প্রতিকূলতার মুখেই বেড়ে ওঠেন জয়।

১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করা হলেও সেই নৃশংস হত্যাযজ্ঞ থেকে প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। ৭৫ এর পর জয় তার মায়ের সঙ্গে জার্মানি এবং লন্ডন হয়ে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন।

জয়ের শৈশব এবং কৈশোর জীবন কেটেছে ভারতে। তিনি নৈনিতালের সেন্ট জোসেফ কলেজ থেকে স্নাতক করেন এবং পরে যুক্তরাষ্ট্রের দা ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক শেষ করেন। পরবর্তীতে হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোক প্রশাসন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন।

২০১৮ সালে জুলাই মাসের ২৫ তারিখ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে দাঁড়িয়ে তার বক্তব্যে বলেছিলেন, নিজে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালেই ‘টাকার অভাবে’ একমাত্র ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এমআইটি) পড়াতে পারেননি।

ছেলে-মেয়ে ও ভাগ্নে-ভাগ্নিদের লেখাপড়া প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন,

আমাদের ছেলে-মেয়েরা পড়াশোনা করেছে, চাকরি করেছে। পড়ার মাঝে গ্যাপ দিয়ে চাকরি করে আবার পড়াশোনা করেছে। একবার গ্র্যাজুয়েশন হয়েছে, কিছু দিন চাকরি করেছে, স্টুডেন্ট লোন নিয়েছে, সেটা শোধ দিয়েছে, আবার ভর্তি হয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি করেছে। আবার সেই লোন শোধ দিয়েছে, এইভাবে পড়েছে। পড়াশোনা করা অবস্থায়ও ঘণ্টা হিসেবে কাজ করেছে, প্রতি ঘণ্টায় একটা ডলার পেত, সেটা দিয়ে তারা চলত। টাকার অভাবে যুক্তরাষ্ট্রের এমআইটিতে দুই সেমিস্টার পড়ে ছেলে জয়ের সেখান থেকে চলে আসার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভারতের ব্যাঙ্গালোর ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক করার পর জয় কিছু দিন চাকরি করে, এরপর আরও উচ্চ শিক্ষার জন্য এমআইটিতে (আমেরিকা) চান্স পেল। আমি তার শিক্ষার খরচ দিতে পারিনি। দুটো সেমিস্টার পড়ার পর নিজে কিছু দিল, আমাদের কিছু বন্ধুবান্ধব সহযোগিতা করল, যার জন্য যেতে পারল। আর আব্বার বন্ধু আমার ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার সব দায়িত্ব নিয়েছিলেন। উনি বলতেন, তুমি পলিটিক্স করো এটা আমার ওপর ছেড়ে দাও। তিনি না থাকলে আমি পড়াতে পারতাম না। এমনকি মিশনারি স্কুলে তারা পড়েছে। সাত দিনই সবজি বা ডালভাত খেতে হতো, একদিন শুধু মাংস খেতে পারত। এভাবে কৃচ্ছ্রতা সাধন করে এরা বড় হয়েছে।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, যখন এমআইটিতে দিতে পারলাম না। আমি প্রধানমন্ত্রী, আমার দ্বিধা হলো, কাকে বলব টাকা দিতে বা কীভাবে আমি টাকা পাঠাবো, বুঝতে পারিনি। কার কাছে দেনা হব? আমার কারণে তার পড়া হলো না। দুটো সেমিস্টার করে তাকে বিদায় নিতে হলো। তারপর সে চাকরিতে ঢুকল।

‘প্রধানমন্ত্রী হয়েও জয়ের পড়ার খরচ দিতে পারিনি’

সজীব ওয়াজেদ জয় ২০০৭ সালে মায়ের অনুরোধেই হার্ভার্ডে ভর্তির আবেদন করেন। সেই সময়ের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৭ সালে বউমা অসুস্থ হলে দেখতে গেলাম। তখন তাকে অনুরোধ করলাম। কারণ আমার ভেতরে এই জিনিসটা খুব কষ্ট লাগত যে, আমি প্রধানমন্ত্রী হয়েও তার পড়ার খরচ দিতে পারিনি। তখন আমি বললাম, তুমি হার্ভার্ডে আবেদন কর। আমি অনুরোধ করার পর সত্যি সে আবেদন করল। চান্স পেয়ে গেল।’ ছেলেকে প্রথম সেমিস্টারের টাকা দেয়ার আশ্বাস দিলেও সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেফতার হয়ে তা আর সম্ভব হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘আমি কথা দিয়েছিলাম, ফার্স্ট সেমিস্টারের টাকা আমি দেব। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার আগে গ্রেফতার হয়ে গেলাম। তবে আমি চেয়েছিলাম, চান্স যখন পেয়েছে যেভাবে পারুক চালাক। পরে বাড়ি ছেড়ে সেই ভাড়ার টাকা দিয়ে, কলেজ থেকে দূরে বাসা নিল যাতে সস্তায় বাসা পায়, গাড়ি রেখে মোটরসাইকেল চালিয়ে সে আসত। রেহানার মেয়ে অক্সফোর্ডে চান্স পেয়ে সে পড়াশোনা করল- স্টুডেন্ট লোন নিয়ে, তারপর পড়াশোনা শেষে চাকরি করে লোন শোধ দিল, সে ২১ বছর বয়স থেকে চাকরি করে। কয়েক বছর চাকরি করার পর সে মাস্টার্স ডিগ্রি করল। আবার চাকরি করল।’

এরপর ২০০২ সালের ২৬ অক্টোবর ক্রিস্টিন ওভারমায়ারকে বিয়ে করেন সজীব ওয়াজেদ জয়। তাদের ঘরে একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। তাদের কন্যার নাম সোফিয়া রেহানা ওয়াজেদ।

২০০৭ সালে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের গ্লোবাল লিডার অব দ্য ওয়ার্ল্ড হিসেবে নির্বাচিত হন সজীব ওয়াজেদ জয়। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে স্লোগানটি যুক্ত হয় তার নেপথ্যে ছিলেন জয়। পরবর্তী সময়ে পর্দার অন্তরালে থেকে গোটা দেশে তথ্য-প্রযুক্তির বিপ্লব ঘটান এই তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ। ২০১৪ সালের ১৭ নভেম্বর সজীব ওয়াজেদ জয়কে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক অবৈতনিক উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দেয়া হয়।

লেখাপড়ার পাশাপাশি রাজনীতির প্রতি জয়ের অনুরাগ থাকলেও তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেন ২০১০ সালে। সে বছর ২৫ ফেব্রুয়ারি মাতৃভূমি রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদ দেয়া হয় তাকে, যার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে আসেন তিনি। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) এর চেয়ারপার্সন।