ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সাবেক প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগগুলো সরকার পতনের পর একে একে প্রকাশ্যে আসছে। ৮০ হাজার টাকার কম বেতনে চাকরি করা হারুনের ছিল নিজস্ব মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান, যা তিনি টাকা পাচারের জন্য ব্যবহার করতেন।
সম্প্রতি এক অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে এসেছে। চাকরির শুরু থেকে যেখানে দায়িত্ব পালন করেছেন, সেখানেই নানান অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। প্রতিটি ধাপে প্রতারণা ও উচ্ছৃঙ্খল কর্মকাণ্ডে যুক্ত হলেও কখনো তাকে শাস্তি পেতে হয়নি। বরং তিনি বছরের পর বছর পদোন্নতি পেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সব ইউনিটে পদায়ন হয়েছেন।
ঘুষ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, জিম্মি করে অর্থ আদায়, মারধর, জমি ও বাড়ি দখল, ফ্ল্যাট দখল, গুম, খুন, হত্যা, অর্থ পাচার, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি, আটকে রেখে নির্যাতন, নিয়োগ বাণিজ্য, নারী কেলেঙ্কারিসহ এমন কোনো অপরাধ নেই, যার সঙ্গে জড়াননি হারুন। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি হাতিয়েছেন হাজার হাজার কোটি টাকা। রাজধানীর উত্তরা, গাজীপুর ও কিশোরগঞ্জে হারুনের হাজার কোটি টাকার সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সম্পত্তি দখল ও দেখাশোনার জন্য একটি তিন সদস্যের স্টিয়ারিং কমিটি আছে। হারুনের নামে ও বেনামে অন্তত তিনটি রিসোর্ট, একাধিক আবাসিক হোটেল এবং আরও অন্তত ১০টি কোম্পানি রয়েছে। শুধু ঢাকাতেই তার দুই ডজনেরও বেশি আলিশান বাড়ি রয়েছে। এছাড়াও অসংখ্য প্লট ও ফ্ল্যাটের মালিক তিনি।
রাজধানীর উত্তরায় হারুনের মালিকানাধীন বহুতল বাড়ি, ফ্ল্যাট ও প্লটের সন্ধান পাওয়া গেছে। ৩ নম্বর সেক্টরের ২০ নম্বর রোডে রয়েছে ৬ তলা একটি আলিশান বাড়ি, যার নাম ‘পার্ক লেক ভিউ’। একই রোডের মাথায় ৮ তলা আরেকটি বাড়ি আছে, যেখানে হারুন তার পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতেন। তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের পর থেকে তিনি আর সেখানে যাননি। এছাড়া ৩ নম্বর সেক্টরের ৭ নম্বর রোডে ১০ কাঠা জায়গার ওপর একটি ১০ তলা মার্কেট আছে, যা তার শ্বশুরের নামে করা হয়েছে। এই ভবনের বাজারমূল্য প্রায় শতকোটি টাকারও বেশি।
হারুনের আরো কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে সোনারগাঁও জনপথ রোডের ৬ তলা একটি বাড়ি, তাজ ফুডকোর্টসহ কয়েকটি দোকান, ১৪ তলা বাণিজ্যিক ভবন, ৭ কাঠার বাণিজ্যিক প্লট এবং বিভিন্ন সেক্টরে আরও অনেক প্লট ও ভবন। এছাড়া বনানী কবরস্থানের দক্ষিণ পাশে ২০ কাঠার একটি প্লট দখল করে ৭০ কোটি টাকায় বিক্রি করেছেন। টঙ্গীর সাতাইশ মৌজায় ৮ বিঘা জমিতে ‘জেএইচ-জিওটেক্স লিমিটেড’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হচ্ছে। গাজীপুরে তার ভূমিদস্যুদের সঙ্গে সম্পর্কের কথাও জানা গেছে।
এই অভিযোগগুলোর বিষয়ে জানতে মোহাম্মদ হারুন অর রশিদের ব্যক্তিগত নম্বরে বারবার ফোন করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে।
আপনার মতামত লিখুন :