অবিশ্বাস্য এক রোমাঞ্চ শেষে শেষ পর্যন্ত হারের স্বাদ পেল বাংলাদেশ। ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে মূল লড়াই টাই হলেও সুপার ওভারে ১ রানে জয় পেয়ে সমতায় ফিরল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
মূল ম্যাচের শেষ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রয়োজন ছিল ৫ রান। বোলিংয়ে সাইফ হাসান। প্রথম দুই বলে রান নিতে ব্যর্থ হন আকিল হোসেন। তৃতীয় বলে সিঙ্গেল নিয়ে তিনি স্ট্রাইক দেন শাই হোপকে। চতুর্থ বলে হোপও নিতে পারেন মাত্র ১ রান।
সমীকরণ দাঁড়ায় ২ বলে ৩ রান। পঞ্চম বলে বড় শট মারতে গিয়ে বোল্ড হন আকিল। শেষ বলে খ্যারি পিয়েরে উড়িয়ে মারলে স্কয়ার লেগে সহজ ক্যাচ ফসকান নুরুল হাসান সোহান। সুযোগে ২ রান নিয়ে নেন হোপ ও পিয়েরে। ফলে ২১৩ রানে টাই হয় ম্যাচ।
এটাই তিন সংস্করণ মিলিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম টাই ম্যাচ।
এরপর শুরু হয় সুপার ওভারের রোমাঞ্চ। বাংলাদেশের হয়ে বোলিংয়ে আসেন মোস্তাফিজুর রহমান। প্রথম বলে সিঙ্গেল নেন হোপ। পরের বলে রাদারফোর্ডকে ফেরান মোস্তাফিজ। তৃতীয় বলে ক্রিজে আসেন ব্র্যান্ডন কিং। এরপর তিন বলে হোপ ও কিং মিলে নেন ৫ রান।
শেষ বলে মোস্তাফিজের কাটারে হোপের ব্যাটের কানায় লেগে ফাইন লেগ দিয়ে বল সীমানা ছাড়ায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১০ রান।
বাংলাদেশের হয়ে ব্যাটিংয়ে নামেন সাইফ হাসান ও সৌম্য সরকার। বোলিংয়ে আসেন আকিল হোসেন। প্রথম বলই ওয়াইড। পরেরটি ‘নো বল’ করেন আকিল, সৌম্য নেন ২ রান। ফ্রি হিটে আসে ১ রান। এরপর স্ট্রাইকে সাইফ। প্রথম বল ডট, পরের বলে ১ রান নিয়ে আবার ব্যাটিং দেন সৌম্যকে।
৩ বলে ৫ রান দরকার, ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ তুলে দেন সৌম্য। পরে শান্ত নেমে লেগ বাই থেকে নেন ১ রান।
শেষ বলে প্রয়োজন ৪। আকিল দেন ওয়াইড। শেষ বলে সাইফ নিতে পারেন কেবল ১ রান। ফলে ১ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ, আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সমতা ফেরায় সিরিজে।
এর আগে প্রথম ইনিংসে পুরো ৫০ ওভার স্পিনার দিয়ে বল করিয়ে ইতিহাস গড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে এক ইনিংসে পুরো ৫০ ওভার স্পিন করায়নি। শ্রীলঙ্কার পুরনো রেকর্ড ছিল ৪৪ ওভার।
বাংলাদেশও তাদের ইনিংসে স্পিননির্ভর বোলিং করে। দুই দলের স্পিনাররা মিলে করেন ৯২ ওভার। ওয়ানডে ইতিহাসে এটি সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১৯ সালে আফগানিস্তান–আয়ারল্যান্ড ম্যাচে স্পিন হয়েছিল ৭৮.২ ওভার।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই সাইফ হাসান আউট হন আকিল হোসেনের বলে। এরপর নিয়মিত বিরতিতে হারায় তাওহিদ হৃদয়, নাজমুল হোসেন শান্ত ও মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনের উইকেট।
একপ্রান্তে লড়ে যান সৌম্য সরকার, ৮৯ বলে ৪৫ রান করেন (৩ চার, ১ ছক্কা)। এটি ছিল তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে কম স্ট্রাইক রেটের ইনিংস।
নাসুম আহমেদকে আগে নামিয়ে দেন দল। পরে সোহানের সঙ্গে ৩৫ রানের জুটি গড়েন। ২৪ বলে ২৩ রান করে ফেরেন সোহান।
৪৬ ওভারে ৭ উইকেটে ১৬৩ রানে আটকে ছিল বাংলাদেশ, কিন্তু তরুণ অলরাউন্ডার রিশাদ হোসেন খেলেন বিধ্বংসী ইনিংস ১৪ বলে ৩৯ রান (৩ চার, ৩ ছক্কা), স্ট্রাইক রেট ২৭৮.৫৭ বাংলাদেশের ইতিহাসে ১০ বলের বেশি খেলা ইনিংসে সর্বোচ্চ।
মিরাজের সঙ্গে ২৪ বলে ৫০ রানের জুটি এনে ৫০ ওভার শেষে বাংলাদেশ থামে ২১৩ রানে। মিরাজ অপরাজিত থাকেন ৫৮ বলে ৩২ রানে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে গুদাকেশ মোতি নেন ৩ উইকেট, আকিল ও আথানেজ ২টি করে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসে রান তাড়ায় শুরুতেই আউট হন ব্র্যান্ডন কিং। দ্বিতীয় উইকেটে ৫১ রান তোলেন আথানেজ (২৮) ও কার্টি (৩৫)। এরপর বাংলাদেশি স্পিনারদের ঘূর্ণিতে একে একে ফেরেন মধ্য ও নিচের সারির ব্যাটাররা।
তবে একপ্রান্তে অটল ছিলেন শাই হোপ (৬৫ বলে ৫৩*)। জাস্টিন গ্রিভস (২৬) ও পরে আকিল হোসেনের (১৬) সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়েন তিনি।
শেষ ওভারে ৫ রানের টার্গেট ডিফেন্ড করে ম্যাচ টাই করেন সাইফ হাসান। বাংলাদেশের পক্ষে রিশাদ নেন ৩ উইকেট, নাসুম ও তানভির ২টি করে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২১৩/৭ (সৌম্য ৪৫, রিশাদ ৩৯, মিরাজ ৩২*; মোতি ৩/৬৫)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৫০ ওভারে ২১৩/৯ (হোপ ৫৩*, কার্টি ৩৫; রিশাদ ৩/৪২)
ফল: ম্যাচ টাই (সুপার ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জয়ী ১ রানে)
পরবর্তী ম্যাচ: বৃহস্পতিবার একই ভেন্যুতে সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ওয়ানডে।