নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন তালিকায় নাম এসেছে মুস্তাফিজুর রহমান দীপু ভূঁইয়ার।
কিন্তু এই ঘোষণার পর থেকেই,তার এই মনোনয়নকে ঘিরে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে এবং ক্ষোভে ফুঁসছে তৃণমূল বিএনপি।কারণ, দীপু ভূঁইয়া কোনোভাবেই বিএনপির সংগ্রামী বা ত্যাগী রাজনীতিক নন বরং তিনি ছিলেন নারায়ণগঞ্জের কুখ্যাত আওয়ামী লীগ নেতা ও গডফাদার খ্যাত শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী।
স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের দাবি, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী শাসনের বিরুদ্ধে যখন ত্যাগী নেতাকর্মীরা হামলা-মামলা, রাস্তায় রক্ত দিয়েছেন, জেল-জুলুম-নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, তখন দীপু ভূঁইয়া ছিলেন আওয়ামী রাজনীতির সুবিধাভোগী। দীপু ভূঁইয়া সবসময়ই ছিলেন আওয়ামী লীগের ছায়াতলে তিনি কখনোই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে মুখ খুলেননি, বরং সন্ত্রাসী শামীম ওসমানকে বিদেশে পালাতে সহযোগিতা করেছিলেন বলেও অভিযোগ উঠে এসেছে দেশী-বিদেশী গণমাধ্যমে।
অন্যদিকে রূপগঞ্জের পার্শ্ববর্তী এলাকা আড়াইহাজারের সাবেক জাতীয় সংসদের হুইপ ও নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুর সাথেও রয়েছে দীপুর নিবিড়তা,মিত্রতা,পারিবারিক এবং সুদৃঢ় সম্পর্ক।এই বাবু ছিলেন আড়াইহাজারের চিহ্নিত ভুমিদস্যু,ক্ষমতার ভয়ে কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায় নি।সে সময়ে দীপু বাবুর সাথে হাত মিলিয়ে বিভিন্ন সময়ে ভুমিদস্যুতার ফায়দা লুটে গিয়েছিলেন। ৫ আগষ্ট এর পর পালিয়ে গেছেন বিগত সময়ের ফ্যাসিবাদ ও ভুমিদস্যু বাবু। তবে দীপু এখনো বাবুর ফেলে যাওয়া বিভিন্ন সম্পত্তির দেখভাল করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। আড়াইহাজার উপজেলা থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত কালাপাহাড়িয়া এলাকা সন্ত্রাস, নানা অপকর্ম ও কুখ্যাত ডাকাতের আঁতুড়ঘর ।এই এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী,কুখ্যাত ডাকাত এবং ছেচড়া চোরসহ নানা অপকর্মের সাথে জড়িত সবাই এখন দীপুর লোকজনের কাঁধের উপর ভর করে রুপগঞ্জের চনপাড়ায় আস্তানা গেড়েছে।তাদেরকে শেল্টার দিচ্ছে যারা, তারা সবাই এই দীপু ভূঁইয়ার লোক।

এমন একজন ব্যক্তিকে বিএনপির প্রার্থী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। বিএনপির ত্যাগী, পরীক্ষিত ও নির্যাতিত নেতাদের বাদ দিয়ে একজন বিতর্কিত আওয়ামী ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া এটা শুধু তৃণমূলের প্রতি অবমাননাই নয়, বরং দলের আদর্শ ও ত্যাগের ইতিহাসের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা বলে মনে করছেন স্থানীয় বিএনপির সিনিয়র নেতারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিএনপি নেতা বলেন, রাজনীতির মাঠে যে শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জে সন্ত্রাস, দমননীতি ও ভয়ের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন, তারই সহযোগী হিসেবে পরিচিত এমন একজন ব্যক্তিকে বিএনপির প্রার্থী করা শুধু রাজনৈতিক ভুল নয়, বরং দলের নীতিবোধের প্রতি এক নির্মম আঘাত ও বটে।
ত্যাগী ও নির্যাতিত বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রশ্ন তুলছেন, যারা বছরের পর বছর মামলা, হামলা, জেল-জুলুম, নির্যাতন সহ্য করেছেন, তারা কি শুধু আজীবন ‘ত্যাগের ইতিহাস’ লিখে যাবে? আর ক্ষমতালোভী, সুবিধাবাদীরা কি এভাবেই এত সহজেই মনোনয়ন পেয়ে যাবে?
তারা বলছে,এমন ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিয়ে বিএনপি যদি ভেবে থাকে যে বিএনপি মাঠে ‘নির্বাচনযোগ্য মুখ’ পেয়েছে, তবে সেটি হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।
রূপগঞ্জ বিএনপির একাধিক নেতার ভাষায়, “এমন প্রার্থীকে মনোনয়ন দিলে জনগণ কীভাবে বিশ্বাস করবে বিএনপি সত্যিকারের পরিবর্তনের শক্তি?”
রূপগঞ্জের মনোনয়ন নিয়ে যে বিতর্ক ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে, তা শুধু স্থানীয় নয় এটি এখন সমগ্র নারায়ণগঞ্জের বিএনপির ত্যাগী কর্মীদের মনের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।এই মনোনয়ন শুধু একটি আসনের প্রশ্ন নয় বরং বিএনপির আত্মপরিচয়, নীতিবোধ ও ত্যাগের রাজনীতির পরীক্ষার ক্ষেত্র।
শেষ প্রশ্ন রয়েই যায়, “ত্যাগ নয়, তোষণই কি হবে মনোনয়নের মাপকাঠি?”






