নারায়ণগঞ্জ । শুক্রবার
২৪শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সংবাদ সম্মেলন করে উল্টো সমালোচনায় মডেল মাসুদ
‘ঠাকুর ঘরে কে? আমি কলা খাইনি’

বাংলা অভিধানে বেশ পরিচিত এক প্রবাদ; ‘ঠাকুর ঘরে কে? আমি কলা খাইনি!’ যার অর্থ; অতি সতর্ক অপরাধী কর্তৃক নিজেই নিজের অপরাধ ফাঁস করে দেওয়া। ‘নব্য বিএনপি নেতা’ শিল্পপতি মাসুদুজ্জামান ওরফে মডেল মাসুদ যেন এই প্রবাদ বাক্যের চেয়েও এক কাঠি সরেস! এই যেমন ‘ঠাকুর ঘরে কে’ তা জিজ্ঞেস না করতেই যেন তিনি নিজেই তার গোপন কোনো কৃতকর্মের ঢোল বাজিয়েছেন। শনিবার মডেল মাসুদের একটি সংবাদ সম্মেলনের পর ঠিক এমনটাই বলে বেড়াচ্ছেন নগরবাসীসহ মহানগর বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা।


জেলাজুড়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি করা ওই সংবাদ সম্মেলনে মডেল মাসুদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘তাঁকে ধানের শীষের মনোনয়নের দৌড় থেকে দূরে রাখতে এবং দলের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করতে বিএনপির ‘ঐতিহ্যবাহী একটি পরিবার’ জঘন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তাকে নারী-শিশু নির্যাতন আইনে মামলা ততা এই কেলেঙ্কারীতে ফাঁসাতে একটি একটি গ্রুপকে নাকি ৩০ লাখ টাকার বিনিময়ে ভাড়া করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই মামলার সকল প্লট সাজিয়ে বিভিন্ন প্রমাণাদিও সংগ্রহ করা হয়েছে। ভাড়া করা ওই গ্রুপটিকে ইতিমধ্যেই নাকি ১৫ লাখ টাকা অগ্রিম পেমেন্ট দেওয়া হয়েছে। ভাড়া হওয়ায় সেই গ্রুপ থেকেই নাকি একজন মডেল মাসুদকে এই তথ্য জানিয়েছে।’


সংবাদ সম্মেলন ডেকে চাঞ্চল্যকর এই তথ্য প্রকাশের পাশাপাশি মডেল মাসুদ নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতৃবৃন্দকে ইঙ্গিত করে নানা মন্তব্যও করেছেন।


এদিকে, মডেল মাসুদের এই সংবাদ সম্মেলন ও তার প্রকাশিত চাঞ্চল্যকর তথ্যকে ‘ঠাকুর ঘরে কলা খাওয়ার সেই প্রবাদের মতই নিজ কৃত-কর্মের স্ব-স্বীকৃত কথা হিসেবেই দেখছেন বিএনপির নেতারা। তারা বলছেন, হয়তো নিজের অতীত কোনো অপকর্ম প্রকাশ পেয়ে যেতে পারে, এমন ভয় থেকেই মডেল মাসুদ সংবাদ সম্মেলন করে বিভিন্ন আগাম পদক্ষেপ নিয়ে থাকতে পারেন। যেন তার সেই ঘটনা জনসম্মূখে এলে তিনি তা ষড়যন্ত্র বলেই চালিয়ে দিতে পারেন।


এমনটা মনে করছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। এই বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির শীর্ষপদস্থ এই নেতা বলেন, ‘আসলে তার এই ঘটনা কিংবা সম্ভাব্য মামলার বিষয়ে তো আমি কিছুই জনতাম না। তিনি নিজেই সংবাদ সম্মেলন করে এটা সবাইকে জানিয়েছেন। তার এই সংবাদ সম্মেলনের পর এখন মানুষ ভাবতে শুরু করেছে যে, তার হয়তো নারী কেলেঙ্কারি বা এমন আপত্তিকর কিছু অতীত রয়েছে! যদি এমন কিছু থেকে থাকে, তাহলে আমি মনে করি যে, সেই আপত্তিকর গোপন বিষয়টি হয়তো কোনো পক্ষ সামনে নিয়ে আসতে যাচ্ছে। তো ১৫ দিনের রাজনীতিতে তিনি নিজেকে ভবিষ্যতের এমপি ভাবতে শুরু করে যেভাবে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে যাচ্ছিলেন এবং বিএনপির প্রকৃত নেতাকর্মীদের নিয়ে বিষোদগার করে স্থানীয় রাজনীতিতে নিজের যেই অবস্থান তৈরীর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন, হয়তো তার সেই গোপন অতীত জনসম্মূখে এসে গেলে তার আসল চরিত্র প্রকাশ পেয়ে যাবে, হয়তো এতে করে তার নব্য রাজনীতির ক্যারিয়ার শুরু করার আগেই শেষ হয়ে যাবে, সেই ভয় বা আতঙ্ক থেকেই হয়তো তিনি এই আগাম সংবাদ সম্মেলন করে সাংবাদিক মহল, রাজনৈতিক মহল, প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট মহলে আগাম কোনো পদক্ষেপ নিয়ে রাখতে চাইছেন। যেন মামলা বা তার গোমর ফাঁস হয়ে গেলে অন্তত বলতে পারেন যে, এটা ষড়যন্ত্র যা তিনি আগেই সংবাদ সম্মেলন করে সবাইকে জানিয়েছেন। আসলে তার এমন কোনো অতীত আছে কিনা বা আদৌ কোনো পক্ষ তার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে কিনা, তা আমার জানা নেই। কিন্তু বিভিন্ন মহলে চাউর হচ্ছে যে, মডেল মাসুদের এই সংবাদ সম্মেলন অনেকটা ‘ঠাকুর ঘরে কে? আমি কলা খাই না’ প্রবাদের মত আত্ম-স্বীকৃত কোনো গোপন কর্মই হবে হয়তো।’


মডেল মাসুদ প্রসঙ্গে মহানগর বিএনপির আহবায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান এই প্রতিবেদককে আরও বলেন, ‘আমরা বিগত ১৬ বছর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ও তাদের দলের নেতাকর্মীদের দ্বারা শারীরিক, মানসিক ও পারিবারিক এমনকি পেশাগত জীবনসহ সর্বক্ষেত্রেই নির্যাতিত হয়েছি। জেল খেটেছি, হামলার শিকার হয়েছি। নিজের সন্তানও গুমের শিকার হয়েছে। এরপরও আন্দোলন সংগ্রাম বা রাজপথ থেকে কখনই পিছ-পা হইনি। কিন্তু এই ১৬ বছর মডেল মাসুদকে রাজপথে তো দূরের কথা বিএনপির জন্য তার এসি রুমে বসেও একটি শব্দ করতে শুনিনি। এখন বিএনপির সুদিনের হাতছানি দেখে তিনি উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন। তিনি ১৫ দিন হলো বিএনপিতে নতুন যোগদান করে এখনই নিজেকে বড় নেতা সহ নানান কিছু মনে করছেন। এমন সদস্য ফরম তো সারা দেশে কয়েক লাখ মানুষ সংগ্রহ করেছে। কিন্তু তিনি সুদিনের সম্ভাবনা দেখে বিএনপিতে যোগদান করেই ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাদের নিয়ে বিষোদগার করে বেড়াচ্ছেন। দলে ভাঙ্গন ধরাচ্ছেন। নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত করছেন। এটা তার কোনো দুর্বিসন্ধি হবে বলে আমি মনে করি।’

এদিকে, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, “মডেল মাসুদের এই সংবাদ সম্মেলনটা হলো ‘ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কলা খাইনা’ প্রবাদের মত। আর অর্থের জোরে কেউ নিজেকে নেতা সাজাতে পারে না। মডেল মাসুদ মহানগর বিএনপির ব্যানারে যে কয়েকটি কর্মসূচি পালন করেছেন, তা দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার উল্লেখযোগ্য ঘটনা। গত ২২ সেপ্টেম্বর মাসুদ বিএনপির কর্মী হিসেবে যোগদান করেছেন। তাকে নিয়ম নীতি মেনে মহানগরের নেতৃত্বে চলার কথা বললেও আদৌ সে সেটা করে নাই। এখনো সে আমাদের সাথে বসে এক কাপ চাও খায়নি।


মডেল মাসুদের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ প্রসঙ্গে টিপু বলেন, “সে যোগদান করেই দলের অভিভাবক সাজতে চায়। সাখাওয়াত-টিপুকে ভাঙ্গতে চায়। উনি বলেছেন বিএনপির এক রাজনৈতিক পরিবার তার বিরুদ্ধে অপবাদ দিচ্ছে। আমার কথা হলো তাহলে উনি নাম বলছেন না কেনো। আমরাও জানতে চাই সেই পরিবারটা কারা। এটা আসলে জনগণের সিম্পেথি পাওয়ার জন্য তার অভিনব কৌশল ও স্ট্যান্টবাজী।


টিপু আরও বলেন, ‘আপনি যাদের নিয়ে আছেন তারা কেউ ওসমান পরিবারের দালাল, কেউ পকেট মারের সন্তান, কেউ গ্যাস চোর আবার কেউ খিচুড়ি রান্নার কথা বলে খালি ডেগের ছবি তুলে দেখিয়েছে। ভাত ছিটাইলে কাউয়ার অভাব হয়না, তাই টাকা দিয়ে আপনি ত্যাগি নেতা তৈরী করতে পারবেন না।”


সবশেষে টিপু আরও গুরুতর অভিযোগ তোলেন: “তার এই মনোনয়নকে কেন্দ্র করে তার পিএস মনিরসহ কয়েকজন আমাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করছেন। আমার উপর যদি কোনো হামলা হয় তাহলে এটার দায় মাসুদ সাহেব ও মনিরকে বহন করতে হবে।”

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >