নারায়ণগঞ্জ । শুক্রবার
২৪শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দুই বছরেও ইজারা শূন্য
বিদেশিদের হাতে যাচ্ছে কক্সবাজার রেলস্টেশন

দেশের প্রথম আন্তর্জাতিকমানের রেলস্টেশন – কক্সবাজার রেলস্টেশন। ২১৫ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত এই দৃষ্টিনন্দন স্থাপনাটি বাইরে থেকে যেন পাঁচতারকা হোটেল, কিন্তু ভেতরে নিস্তব্ধতা আর অচলাবস্থাই বাস্তব চিত্র। ইজারা বা বরাদ্দ না দেওয়ায় দুই বছর পার হয়ে গেলেও এখনো পুরোপুরি চালু হয়নি এই স্টেশনের কার্যক্রম।

এমনকি খোদ বাংলাদেশ রেলওয়েও স্বীকার করছে, তারা এককভাবে এই বিশাল স্টেশন পরিচালনায় ‘অক্ষম’। তাই এখন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে— বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানকে স্টেশন পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ার। এ লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের প্রস্তুতি চলছে রেল মন্ত্রণালয়ে।

রেললাইন চালু, কিন্তু স্টেশন অচল,২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর উদ্বোধন হয় চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন। ওই বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ‘পর্যটক এক্সপ্রেস’ ও ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ নামের দুটি ট্রেন নিয়মিত চলাচল শুরু করে।তবে প্রায় দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যক্রম শুরু হয়নি স্টেশনের।

রেলওয়ে হিসাব বলছে, শুধু ইউটিলিটি খাতেই মাসে খরচ হতে পারে ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা,যা তাদের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। তাই তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে পরিচালনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

৬ তলা স্টেশন, ১৭টি স্থাপনা তবুও নিস্তব্ধতা।আধুনিক নকশার ছয়তলা কাচঘেরা ভবনটি বাইরে থেকে আলিশান কোনো স্থাপনার মতোই। ভেতরে রয়েছে ফুড কোর্ট, শপিং স্পেস, হোটেল রুম, অফিস, রেস্টুরেন্ট, মাল্টিপারপাস হলসহ অগণিত সুযোগ-সুবিধা কিন্তু তা কেবলমাত্র কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ।

সরেজমিন দেখা যায়, স্টেশনজুড়ে নীরবতা।চলন্ত সিঁড়ি বন্ধ, কিছু জায়গায় লোহার ব্যারিকেড আর আবর্জনার বিন দিয়ে পথ আটকে রাখা। নেই টিকিট কাউন্টার, নেই দিকনির্দেশনা, আলোর স্বল্পতায় গা ছমছমে পরিবেশ। একমাত্র টয়লেটটিও ব্যবহার অনুপযোগী অবস্থায়।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের নথি অনুযায়ী, ইতোমধ্যে রেলওয়ে তিনবার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে দরপত্র অনুমোদনের জন্য।
প্রস্তাব অনুযায়ী, যেসব প্রতিষ্ঠানের পাঁচতারকা হোটেল পরিচালনার অভিজ্ঞতা আছে, কেবল তারাই অংশ নিতে পারবে। দেশীয় প্রতিষ্ঠান চাইলে বিদেশিদের সঙ্গে জয়েন্ট ভেঞ্চারেও অংশ নিতে পারবে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন,“আমরা চাই দক্ষ ও অভিজ্ঞ বিদেশি প্রতিষ্ঠান কক্সবাজার রেলস্টেশন পরিচালনা করুক। দেশীয় প্রতিষ্ঠান চাইলে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জেভি (জয়েন্ট ভেঞ্চার) করতে পারবে। দরপত্রের প্রস্তুতি চলছে, মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পেলেই প্রকাশ করা হবে।”

১৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প, কিন্তু সফলতা শূন্য।২০১৮ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া দোহাজারী–কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্পের মোট ব্যয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। নির্মাণে কাজ করেছে চীনের CREC, CCECC, এবং বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন ও ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার।
কিন্তু আজ, সেই প্রকল্পের অন্যতম আকর্ষণ কক্সবাজার স্টেশনটি কার্যত অচল অবস্থায় পড়ে আছে।

বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের মত বলছে,বিদেশির ওপর নির্ভর না করে দেশীয় সক্ষমতা গড়তে হবে।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন,“উদ্যোগের অভাবে এমন অবচয় হচ্ছে। শত কোটি টাকার বিনিয়োগ থেকেও কোনো সুফল মিলছে না। বিদেশিদের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভর না করে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকেও তৈরি করা জরুরি।”

যদিও স্বপ্ন ছিল দেশের পর্যটন নগরী কক্সবাজারে হবে আধুনিক রেলস্টেশন যা বদলে দেবে ভ্রমণ অভিজ্ঞতা। কিন্তু দুই বছর পর সেই স্বপ্ন এখন অব্যবস্থাপনার ধুলায় আচ্ছন্ন। রেলওয়ে এখন চায় বিদেশি অভিজ্ঞতায় নতুন সূচনা।

কিন্তু সবশেষে প্রশ্ন রয়েই যায়,”দক্ষতা কি আমদানি করা যায়, নাকি তৈরি করতে হয় নিজেদের মধ্যেই”?

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >