নারায়ণগঞ্জ । শুক্রবার
২৪শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মডেল মাসুদের ছায়ায় ওসমান ঘনিষ্ঠরা

আওয়ামী লীগের পতনের পর রাজনীতির মাঠে হঠাৎ সরব হয়ে উঠেন ব্যবসায়ী মাসুদুজ্জামান ওরফে মডেল মাসুদ। চেম্বার অব কমার্সের নেতৃত্বের চেয়ারে বসার পর এক সংবাদ সম্মেলনে তার করা মন্তব্যে তোলপাড় শুরু হয়েছিল সর্ব মহলে। দেশের পট পরিবর্তনের পর বিএনপির কোনো এক নেতা চেম্বার থেকে চাঁদা আদায় এবং পরবর্তীতে নাকি চাপে পরে তা ফেরতও দিয়েছেন! এমন রহস্যে ঘেরা ও নাটকীয় এক তথ্য সামনে এনে গণমাধ্যমেও জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। এছাড়াও আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে নিজেকে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেও সম্প্রতি সমালোচিত হচ্ছেন বিএনপি অঙ্গনে।

দলটির নেতৃবৃন্দরা বলছেন, দুর্দিনে দেখা না গেলেও বিএনপির সুদিনের হাতছানিতে গা ভাসিয়েছেন মডেল মাসুদ। সুবিধাবাদি হিসেবে সমালোচনা থাকলেও নির্বাচনের আগাম প্রস্তুতি নিতে দেখা যাচ্ছে তাকে। নারায়ণগঞ্জের রাজনীতির দিকে নজর রাখা প্রবীন ব্যক্তিদের মতে, প্রস্তুতির অংশ হিসেবে নিজ বলয়ের গন্ডি বিস্তৃত করতে যারপরনাই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মডেল মাসুদ। মাসুদের দরজায় বিএনপির সুবিধাবাদীরা ঢু মারলেও তার পাশে আওয়ামী লীগ ও বিতর্কিত ওসমান পরিবারের গডফাদারদেরও বিচরণ রয়েছে বলে অভিযোগ বিএনপির ত্যাগী এবং পরীক্ষিত নেতাদের।


বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, বিগত দিনে বিএনপির হয়ে রাজনীতির মাঠে ‘পা’ না রাখা ব্যবসায়ী মডেল মাসুদ নির্বাচনের পথে হেটে চললেও বিএনপির মূল ধারার ও ত্যাগী নেতাদেরকে সঙ্গী হিসেবে না পেয়ে আওয়ামী লীগ তথা ওসমান পরিবারের বিশ্বস্ত ও ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদেরকেও নিজ ছায়াতলে আশ্রয় দিয়ে চলেছেন।

প্রায় মাস খানেক আগে ইসদাইরে বিএনপির সহযোগি সংগঠন তাঁতীদলের সমালোচিত নেতা সিদ্দিকুর রহমান উজ্জলের মায়ের কুলখানীর দোয়া অনুষ্ঠানে মডেল মাসুদ অংশগ্রহণ করলেও তার চারপাশে দেখা গেছে আওয়ামী লীগের দোসর ও পলাতক এমপি শামীম ওসমান এবং আজমেরী ওসমানের বিশ্বস্ত কর্মীদের। এর মধ্যে ইসদাইর রাবেয়া হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি সমালোচিত সিদ্দিকুর রহমান উজ্জলের সাথে মডেল মাসুদের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিএনপির স্থানীয় ত্যাগী নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন।


নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফতুল্লা থানা ও একটি ওয়ার্ড বিএনপির গুরুত্বপূর্ন পদে থাকা এক নেতা সময় নারায়ণগঞ্জকে বলেন, মাসুদুজ্জামান ওরফে মডেল মাসুদ সাহেব বিএনপি থেকে মনোনয়ন চান। বিগত দিনে নারায়ণগঞ্জের বিএনপির রাজনীতিতে তার ভূমিকা কী কিংবা আদৌ কতটুকু আছে তা বিএনপির সকল নেতাকর্মী জানেন। তবে যেহেতু তিনি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী এবং তাকে বিএনপি ঘরণার বলে মনে করা হয়, এমনকি তিনি বিএনপির দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, সেহেতু তিনি বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝেই থাকবেন বলে আমরা ধারণা করেছিলাম। কিন্তু বাস্তবে কিছু ভিন্নতাও দেখতে পেলাম। ইসদাইরে তাতীদল নেতা উজ্জলের মায়ের মৃত্যুতে কুলখানির অনুষ্ঠানে মাসুদ সাহেব এসেছেন ঠিকই, তবে তার পাশে আওয়ামী লীগের দোসর এবং শামীম ওসমান ও আজমেরী ওসমানের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা মিশে ছিলো। এর মধ্যে শামীম ওসমান ও আজমেরী ওসমানের একনিষ্ঠ কর্মী ও ইসদারের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে পরিচিত ফিরোজ মাহমুদ সামা এবং তার ভাই ইসদাইর রাবেয়া হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি সিদ্দিক সহ আওয়ামী লীগের দোসররা মডেল মাসুদের অনুসারী তার পাশেই বিচরণ করেছেন। ইসদাইরে থাকা ওসমানীয় সাম্রাজ্যের ‘বিশ্বস্ত গার্ডরা’ এখন মডেল মাসুদের ঘনিষ্ঠ লোক, যা বিএনপির কর্মী হিসেবে আমাদের জন্য লজ্জার। মডেল মাসুদ ইসদাইরে তার কর্তৃত্ব স্থাপন ও নিজ বলয় ভারি করতে গিয়ে শামীম ওসমানের নিজস্ব লোকদেরকে তার ছায়াতলে আনতে শুরু করেছেন। গত ৫ আগস্টের পর ফিরোজ মাহমুদ সামা, সিদ্দিক, খান বাবু ও শামীম ওসমানের সহচররা গা ঢাকা দিলেও মডেল মাসুদ বিএনপি থেকে নির্বাচন করার ঘোষণা দেয়ার পরপরই তারা আবারও এলাকায় ফিরে নিজেদের পূনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন। অথচ, তারা জুলাই হত্যা মামলার আসামী এবং ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে চেষ্টা এবং হামলায় অংশ নিয়েছিলেন।’


স্থানীয় আরেক বিএনপি নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, শামীম ওসমানের অন্যতম বিশ্বস্তকর্মী ফিরোজ মাহমুদ সামা ও তার ভাই সিদ্দিক হলো মাসুদুজ্জামান তথা মডেল মাসুদের নিকটাত্মীয়। মূলত নুর ডাইং ও মাদার কালার নামক শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. সোবহান হলেন মডেল মাসুদের আপন মামা। অন্যদিকে, ইসদাইরের সিদ্দিক ও সামা হলেন মডেল মাসুদের মামা সোবহানের চাচাতো ভাইয়ের ছেলে তথা সম্পর্কে ভাতিজা। ফলে তারা আওয়ামী লীগ ও শামীম ওসমানের প্রসিদ্ধ হাতিয়ার হওয়া সত্বেও মডেল মাসুদ আত্মীয়তার সুবাধে তাদেরকে ইসদাইরে পূনরায় প্রতিষ্ঠিত করতে শুরু করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং মডেল মাসুদের কাঁধে ভর করে ইসদাইরে নিজেদের হারানো প্রভাব পূনরুদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছেন। যা ভবিষ্যতে ওসমান পরিবারকে পূনঃপ্রতিষ্ঠার পথও অনেকটা সুগম করে তুলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’


উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও মডেল গ্রুপের মালিক মাসুদুজ্জামানকে ইঙ্গিত করে ইতিপূর্বে কড়া ভাষায় ভর্ৎসনা করেছেন মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। তিনি বলেছিলেন, ‘১৫ বছর যাদের মাঠে দেখি নাই, যারা দল করে নাই, যারা বিএনপি থেকে যোজন দূরে ছিল, তারা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করছেন। বিএনপির নাম শুনলে যারা সামনে আসে নাই তারা আজ বিএনপির কথা বলতে চায়। বিএনপি থেকে নমিনেশন চায়। আজকে যারা বিএনপিতে এসে বিএনপিকে বিভক্ত করতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে ভালো না। আপনারা সুসময়ে মধু খেতে এসেছেন। মধু আপনাদের ভাগ্যে হবে না ইনশাল্লাহ।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >