দীর্ঘ অপেক্ষা ও নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে আসন্ন ত্রয়োদশ নির্বাচনের সম্ভ্যাব্য প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ২৩৭টি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে বিএনপি।
সোমবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই নাম ঘোষণা করেন।
এবারের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে এবার রাজনৈতিকভাবে দূরদর্শীতায় এগিয়ে যাচ্ছে দলটি।নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনের মধ্যে ৪টি আসনে বিএনপি প্রার্থীতা ঘোষণা করেছে। তবে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপি কোনো মনোনয়ন বা প্রার্থীতা দেননি।এই আসনটি জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এর নেতা মুফতি মনির হোসেন কাশেমীর জন্য বিএনপি তার শরীক দলের জন্য ছেড়ে দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন আসনে যারা মনোনয়ন পেলেন তারা হলেন,”নারায়ণগঞ্জ-১ (রুপগঞ্জ) আসনে মোস্তাফিজুর রহমান ভূইয়া দিপু,নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে নজরুল ইসলাম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁও ও সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে আজহারুল ইসলাম মান্নান ও নারায়ণগঞ্জ-৫ ( শহর ও বন্দর) আসনে মাসুদুজ্জামান মাসুদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।”
তবে এখনও কুয়াশাচ্ছন্ন রয়েছে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনটি। এ আসনটিতে কে মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন তা পরবর্তীতে ঘোষণা করা হবে বলে জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ।
তথ্য মতে,নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জে) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন কাজী মনিরুজ্জামান মনির, মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দীপু ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন। এই আসন থেকে মোস্তাফিজুর রহমান দীপুকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খাঁন আঙ্গুর ও তার ভাতিজা বিএনপির সহঅর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন। এই আসনে নজরুল ইসলাম আজাদকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ-৩ (সিদ্ধিরগঞ্জ-সোনারগাঁ) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিম ও যুব উন্নয়নের সাবেক মহাপরিচালক এসএম ওলিউর রহমান আপেল। এই আসনে আজহারুল ইসলাম মান্নান কে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা) আসনটিতে ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও ব্যবসায়ী শাহ্ আলম,জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজিব, ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহীদুল ইসলাম টিটু, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারী ভূঁইয়া, মশিউর রহমান রনি মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। এই আসনটিতে বিএনপি কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেননি।
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে (সদর-বন্দর) মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, আবু আল ইউসুফ খান টিপু, আতাউর রহমান মুকুল, মাকসুদুল আলম খোরশেদ, আবু জাফর আহমেদ বাবুল ও অধ্যাপক আলিয়ার হোসেন। এই আসনে বিএনপি মাসুদুজ্জামান মাসুদকে মনোনয়ন দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, যারা দীর্ঘদিন রাজপথে থেকে আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন তাদের মধ্য থেকে ২৩৮ জনের সম্ভ্যাব্য প্রার্থী ঘোষণা করেছন। শরিক দলগুলোর সাথে আলোচনা এবং স্থায়ী কমিটি যদি মনে করে কোনো আসনে পরিবর্তন আনবে,সেক্ষেত্রে নিয়ম মেনে পরিবর্তন আনবেন বলেও জানান তিনি।
স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকেই নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন।দলের নেতাকর্মীরা একে “ত্যাগী নেতাদের প্রাপ্য স্বীকৃতি” বলে মন্তব্য করেছেন।
তৃণমূল নেতারা বলছেন, “যাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তারা দীর্ঘদিন ধরে দলের হয়ে আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলেন। তাদের প্রতি জনগণের আস্থা আছে।তারা ধানের শীষের বিজয় ছিনিয়ে আনবেই।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়বেন জেলার পাঁচজন শীর্ষস্থানীয় নেতা,যাদের মধ্যে চারজনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনেই এবার হবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই।এই মনোনয়ন শুধু কয়েকজনের নয়, এটা পুরো নারায়ণগঞ্জের ত্যাগী নেতাকর্মীদের জয়। এখন একমাত্র লক্ষ্য ধানের শীষের বিজয়। অন্যান্য প্রার্থীদের মোকাবিলায় বিএনপির মনোনীত প্রার্থীরা ইতোমধ্যে মাঠে নেমে ধানের শীষকে বিজয়ের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন।







