পুরো নাম শামীম আহমেদ। লোকে তাকে চেনেন টাকলা শামীম নামে। একদা দৌর্দণ্ড প্রভাব আর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ফতুল্লার দাপা এলাকায় কুখ্যাতি কুড়িয়েছিলেন এই যুবলীগ ক্যাডার। সেই ৯০ এর দশক থেকেই ফতুল্লার দাপা ইদ্রাকপুরসহ আশপাশের এলাকায় তিনি গড়ে তুলেছিন ভয়াবহ এক সন্ত্রাসী বাহিনী। মানুষের অঙ্গহানী করা যেন তার কাছে ছিলো ‘ডাল-ভাতের’ মত অতি এক সাধারণ বিষয়! ১৯৯৬ সনে সন্ত্রাসীদের গডফাদার তকমা পাওয়া শামীম ওসমান যখন প্রথমবারের মত এমপি হন, তখন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে এই টাকলা শামীম। দাপা এলাকায় তৎকালীন এমপি শামীম ওসমানের সন্ত্রাসের রাজত্বের বিস্তার ঘটাতে মরিয়া হয়ে উঠে সে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শামীম ওসমানের ক্যাডার হিসেবে পরিচিতি বাড়িয়ে ৯৬ সাল থেকে এলাকায় চাঁদাবাজী ও দখলদারিত্বের মত নানা অপরাধ সংঘঠিত করেছিলো বীরদর্পে। এতটাই ভয়াবহ ও দুর্ধর্ষ হয়ে উঠেছিলো যে, তার পথে কেউ বাধা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেই প্রাণ হারানোর উপক্রম হতো যেকারোর। টাকলা শামীমের দ্বারা এমনই নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে চিরতরে পঙ্গুত্ব বরন করেছেন দাপা এলাকার আবুল হোসেন। তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে আবুল হোসেনকে ধরে নিয়ে তার দুই হাতের কব্জি কেটে আলাদা করে দেয়ার মত রোম হর্ষক ও নিষ্ঠুরতার এক ভয়াবহ কাণ্ড ঘটায় এই টাকলা শামীম ও তার সহযোগি সন্ত্রাসী ফতুল্লার বাঘা আরিফ।
স্থানীয় প্রবীন ব্যক্তিরা সেই ঘটনার স্মৃতিচারণ করে জানান, দাপার আবুলও এলাকায় বেশ প্রভাব গড়ে তুলেছিলেন। তবে শামীম ওসমানের পরিচয়ে টাকলা শামীম ছিলেন সর্বেসর্বা। সে সময়ে আবুলের সাথে টাকলা শামীম ও ফতুল্লার আরেক দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী বাঘা আরিফের সাথে বিরোধ তৈরী হয়। এর জেরে আবুলকে ফতুল্লার তৎকালিন ‘জালাল হাজীর ইটের খোলায়’ ধরে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দ্বারা তার দুই হাতের কব্জি কেটে আলাদা করে দেয় টাকলা শামীম ও বাঘা আরিফ। এই ঘটনায় এলাকায় বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছিলো। পরবর্তী সময়ে আবুল তার দুই হাতের কব্জি তথা হাত বিহীন অবস্থায় পঙ্গুত্বের নির্মম জীবন যাপন চালিয়ে যান।
এদিকে, আওয়ামী লীগের শাসনামলের শেষের দিকের বেশ কয়েক বছর টাকলা শামীম এলাকায় যুবলীগের পরিচয়ে প্রভাব বিস্তারসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলো বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। তবে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর কিছুটা নিরব হলেও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছিলো এই শামীম।
অবশেষে চুরির অভিযোগে ‘টাকলা শামীম’কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার রাতে ফতুল্লার দাপা পোস্ট অফিস রোডস্থ রেইনবো মোড় এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত শামীম ওই এলাকার মৃত জলিল মিয়ার ছেলে। বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। ফতুল্লা মডেল থানার ইন্সপেক্টর (অফিসার ইনচার্জ) শরিফুল ইসলাম গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, চুরির একটি মামলায় শামীমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, কারখানার ভিতরে একটি নতুন ভবন নির্মাণের জন্য আনা এক ট্রাক সিমেন্ট ও বালু রাতের অন্ধকারে শামীম ও তার সহযোগীরা কারখানার নিরাপত্তাকর্মীকে ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক নিয়ে যায়। এই ঘটনায় কারখানার মালিক আসাদ ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। সেই মামলার ভিত্তিতে পুলিশ মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে। শামীমকে গ্রেফতারের পর এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে সস্তি দেখা দিয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।





