নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় এক ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। হত্যার পর লাশের দু’পা কেটে পৃথক করে পলিথিনে মুড়িয়ে ড্রামে ফেলে রাখে ঘাতকেরা। পরে সুযোগ বুঝে ওই লাশটি রাতে ফতুল্লার তক্কারমাঠ এলাকায় মাওয়া মার্কেটের পেছনে ঝোপে ফেলে দেয় ।
ফতুল্লা মডেল থানার ওসি রেহানুল ইসলাম জানান, স্থানীয়রা ঝোপের ভেতর থেকে দুর্গন্ধ পেয়ে খবর দেয় পুলিশকে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ড্রামের মুখ খুলে পলিথিন মোড়ানো লাশ উদ্ধার করে। তবে লাশের দু’পা ছিল না। পরে অভিযান চালিয়ে পুলিশ বিচ্ছিন্ন দু’পা দুটিরও সন্ধান পায়।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপারেশন) তারেক আল মেহেদী জানান, উদ্ধার হওয়া লাশটি মাদক ব্যবসায়ী নয়ন (৪৯)-এর। তিনি জানান, নয়ন সম্প্রতি একটি মাদক মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ছিলেন এবং ৮-১০ দিন আগে জামিনে মুক্ত হয়ে আসেন। মুক্তির পরই তিনি খুন হন।
এ ঘটনায় পুলিশ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। খুনের মোটিভ উদঘাটন ও হত্যায় জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
নিহত নয়ন ফতুল্লার ননন্দলালপুর এলাকার মো. সালামের ছেলে। পেশায় তিনি মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন এবং তার বিরুদ্ধে মাদক, অস্ত্র, গাড়ি ছিনতাইসহ নানা অপরাধে ৮-১০টি মামলা রয়েছে। প্রায় ৩-৪ বছর আগে নয়ন হেরোইনসহ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন এবং ওই মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হন।
কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিনার সঙ্গে ফতুল্লার ব্যাংক কলোনি এলাকায় বসবাস করছিলেন তিনি। সাবিনার বিরুদ্ধে পতিতাবৃত্তি ও মাদক ব্যবসার অভিযোগও রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে নয়নের প্রথম স্ত্রী হাসিনার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর তিনি সাবিনাকে বিয়ে করেন। কিন্তু পরে সাবিনার সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে রাসেল ওরফে ঠোঙ্গা রাসেল নামের এক যুবকের। বিষয়টি জানতে পেরে নয়ন ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং এ নিয়ে দাম্পত্য কলহের জেরে সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
পরবর্তীতে নয়নকে হত্যার পরিকল্পনা করে সাবিনা, তার দুই মেয়ে, এবং প্রেমিক রাসেল। স্থানীয়দের ধারণা, হত্যার পর লাশ গুমের উদ্দেশ্যে ড্রামের ভেতরে ভরে ফেলার সময় সমস্যা হওয়ায় লাশের দু’পা কেটে ফেলা হয়।
ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ রাসেল, সাবিনা, তাদের দুই মেয়ে, এবং সহযোগী দুই নারীকে গ্রেপ্তার করে।
রাসেলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পুলিশ সিদ্দিরগঞ্জ থানার জালকুড়ি এলাকা থেকে সাবিনা(৪০), তার দুই মেয়ে সুমনা(২০) ও সানজিদা(১৮), প্রেমিক রাসেল(৪৫) ও সহযোগী চয়ন(৪০) আটক করে।
পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, পরকীয়া সম্পর্কের জের ধরেই নয়নকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। হত্যার পর লাশ গুম করতে গিয়ে এই ভয়াবহ দৃশ্যের জন্ম দেয় ঘাতকেরা।







