নারায়ণগঞ্জ । শুক্রবার
২৪শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

খানপুর ধর্ষণ
নিরাপত্তাকর্মীকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ৩, মূল হোতা ‘অভি’ পলাতক

নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুর এলাকায় ধর্ষণের অভিযোগে আবু হানিফ (৩৫) নামে এক নিরাপত্তাকর্মীকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে সদর মডেল থানা পুলিশ। মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) রাতে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—মো. বাহার (৩৬), পিতা ফরচান, মাতা সায়েস্তারা, সাং টনকী, মুরাদনগর, কুমিল্লা; মো. মুশফিকুর রহমান জিতু (২৯), পিতা শফিকুর রহমান মুনা, সাং ১০৪ নবাব সিরাজউদ্দৌলা রোড, মেট্রো হল, নারায়ণগঞ্জ; এবং মো. সাইদুল ইসলাম (২৫), পিতা ফরচান, মাতা সায়েস্তারা, সাং টনকী, মুরাদনগর, কুমিল্লা। তারা বর্তমানে খানপুরের ডন চেম্বার মোবারক ভিলায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করছিলেন।

বুধবার (২২ অক্টোবর) গ্রেপ্তার তিনজনকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনায় তাদের সরাসরি সম্পৃক্ততা নিশ্চিত হওয়ার পর এদের গ্রেপ্তার করা হয়। মূল হোতা ‘অভি’ এখনো পলাতক।

এদিকে, নিহত আবু হানিফের বোন জয়নাব ওরফে রাবেয়া অভিযোগ করেন, তার ভাই খানপুরের ইতু ভিলায় সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কাজ করতেন। সোমবার দুপুরে নিজ ঘরে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় খানপুরের অভি ও আরও কয়েকজন এসে হানিফকে লাথি মেরে বিছানা থেকে ফেলে দেয় এবং মাথা দেয়ালে ঠুকে দেয়। পরে তারা হানিফকে বেধড়ক মারধর করে নাসিক ওয়াসার জোড়া পানির ট্যাংকির ভেতরে নিয়ে যায়।

রাবেয়া বলেন, “অভির লোকজন বলে হানিফ নাকি ১২-১৩ বছরের এক মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। আমরা জানি না বিষয়টা সত্য না মিথ্যা। কিন্তু যে মেয়েকে ধর্ষণের কথা বলা হচ্ছে, সে তো স্বাভাবিক অবস্থায় আছে। অথচ আমার ভাইকে তারা পিটিয়ে মেরে ফেলেছে।”

তিনি আরও জানান, “পরে অভি আমাদের ডাকলে আমি ও আমার স্বামী ইবরাহিম সেখানে যাই। অভি আমার স্বামীকে চড়-থাপ্পড় মারে, লুঙ্গি টান দেয় এবং আমাদের হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। সন্ধ্যায় খবর পাই, আমার ভাইয়ের লাশ ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট খানপুর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়েছে।”“আমার ভাইয়ের তিন সন্তান—বড় ছয় বছর, মেঝ আড়াই বছর এবং ছোট মাত্র ছয় মাসের। যদি হানিফ কোনো অপরাধ করেও থাকে, দেশের তো আইন আছে, আদালত আছে। তাকে এভাবে হত্যা করা হলো কেন? এখন তার বাচ্চাগুলো অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।”

নিহতের ভগ্নিপতি ইবরাহিম বলেন, “দুপুরে খবর পাই হানিফকে মারধর করা হচ্ছে। পরে গিয়ে দেখি অভি ও তার লোকজন আমাকে এবং আমার স্ত্রীকে ট্যাংকির ভেতরে নিয়ে গালমন্দ করে, মারধর করে, লুঙ্গি টান দেয়। তারা আমাদের কাছ থেকে টাকা চায়, না দিলে নানা হুমকি দেয়। এরপর হানিফকে একটি অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যায়।”

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পেছনে ব্যক্তিগত শত্রুতা এবং মিথ্যা অভিযোগের বিষয়ও থাকতে পারে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এবং তদন্ত শেষ হলে ঘটনার প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে চারজনের নাম উল্লেখ করে সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। পলাতক অভিকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >