কেউ মাথার ঘাম পায়ে ফেলেছেন, কেউ সাত-পাঁচ না ভেবেই নির্যাতনের খরগ সয়ে গেছেন বছরের পর বছর; তোয়াক্কা করেননি নিজ অর্থ-বৃত্তেরও। শত ত্যাগ-তিতিক্ষায় তিলে তিলে যেন আবাদ করেছেন ‘ধানের শীষের’। রাজপথের বৈরি মৌসুম কাটিয়ে ফসল ঘরে তোলার সময় এসেছে কেবল। শ্রমে-ঘামে আবাদ করা সেই ধানও পেকেছে সু-সময়ের বাতাসে। নির্বাচন ঘিরে বিএনপি অঙ্গনে এমন ‘বসন্ত বাতাস’ দেখা দিলেও ফতুল্লা থানা এলাকা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিরাজ করছে ভিন্ন আবহ। ঠিক যেন ‘পাকা ধানে মই’ দেয়ার মতই এক অনিষ্টকর আবহ এটি! অন্তত এই আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতা ও তাদের অনুসারীদের জন্য এই উক্তি হয়তো অমূলক নয়।
প্রায় ডজন খানেক বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এই আসন ঘিরে দলীয় প্রতীকের যেই চাষাবাদ করেছেন, ফসল তোলার সময় আসতেই বিএনপি নেতাদের সেই ‘পাকা ধানেই যেন মই’ দিতে যাচ্ছেন জমিয়তে উলামা ইসলামের নেতা মুফতি মনির হোসেন কাসেমী।
তথ্য বলছে, আসনটি জোটের কাছে ভাগ করা হতে পারে; এমন গুঞ্জন ছিলো শুরু থেকেই। এবার সেই গুঞ্জন বাস্তবতায় রূপ নিতে শুরু করেছে। গত শনিবার নারায়ণগঞ্জ শহরের ইসদাইরে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে জমিয়তে ওলামা ইসলামের ব্যানারে কাসেমী পরিষদ আয়োজিত ‘আজমাতে সাহাবা’ নামক এক সমাবেশের পর এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনের মধ্যে অন্যতম একটি ভাবা হয় চার আসনকে। ফতুল্লা থানা এলাকা নিয়ে গঠিত এই আসনটির গুরুত্ব রয়েছে নানা কারণেই। এখানে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন চেয়ে আলোচনায় এসেছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী দলীয় নেতাদের মধ্যে আলোচনায় এসেছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও আসনটির সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, নির্বাহী কমিটির সদস্য শিল্পপতি মুহাম্মদ শাহ-আলম, বর্তমান জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, যুগ্ম আহবায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজীব, ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহীদুল ইসলাম টিটু, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী, জেলা যুবদলের আহবায়ক সাদেকুর রহমান ও সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি সহ বিভিন্ন পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতৃবৃন্দ।
তারা নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিজেদের মেলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফা নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়িয়েছেন। জনসম্পৃক্ত কাজে নিয়োজিত থেকে ভোটারদের মাঝে নিজেদের অবস্থান গড়ার পাশাপাশি ধানের শীষ ঘিরে বুনে ছিলেন আগামীর স্বপ্নও। তবে জোটের কাছে যেন সেই স্বপ্ন-ভঙ্গ হতে যাচ্ছে প্রত্যেকেরই।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতা মুফতি মনির হোসেন কাসেমীকে ঘিরে যখন এই আসনে জোটের গুঞ্জন ও পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি-তর্ক চলছিল, ঠিক তখনই শনিবারের ওই সমাবেশ থেকেই যেন স্পষ্ট বার্তা দেয়া হলো দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপি নেতাদের।
সমাবেশটিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সভাপতি মুফতি মনির হোসেন কাসেমীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হন বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য সালাহ উদ্দিন আহাম্মেদ। তার আগমন ঘিরে মনির হোসেন কাশেমীর ওই সভায় নারায়ণগঞ্জ-৪ ও ৫ আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী সকল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হন। তারা কাসেমীর সভামঞ্চের এক টেবিলেই বসেন এবং অনেকে বক্তব্য রাখেন। এসময় এই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপি নেতাদের চেহারায় কালো মেঘের ঘনঘটা পড়েছিল যেন! যা আঁচ করতে পেরেছিলেন তাদের অনুসারী কর্মী-সমর্থকরাও।
বিএনপির বিশেষ কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের মতই এবারও বাংলাদেশ জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের সাথে জোটগঠন করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে বিএনপি। ২০১৮ সালের ওই নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের অন্যতম গুরুত্বপূর্ন আসন হিসেবে বিবেচিত নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে জোটের প্রার্থী হিসেবে মনির হোসেন কাশেমী ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন। বিতর্কিত ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তৎকালিন প্রভাবশালী প্রার্থী শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে বিপুল সংখ্যক ভোটও পড়েছিল কাশেমীর ঝুড়িতে।
সেই ধারায় এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও কাশেমী জোটের মাধ্যমে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেলে নির্বাচন করবেন বলে বক্তব্য রেখেছিলেন। তারও আগে থেকেই তাকে নিয়ে চলছিলো নানা গুঞ্জন। এরই মাঝে কাশেমী আয়োজিত ওই সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ অংশগ্রহণ করে যেন ২০১৮’র নির্বাচনের সেই জোটের প্রার্থীকে বেছে নেয়ারই এক প্রত্যক্ষ ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে। ফলে কাসেমীকে জোটের প্রার্থী করা হলে এই আসন ঘিরে নতুন কোনো সমীকরণ দাঁড়ায় কিনা তা নিয়েও বিশ্লেষন চলছে রাজনৈতিক বোদ্ধা মহলে।







