নারায়ণগঞ্জ । শুক্রবার
২৪শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সার সংকট : বিশু-বাচ্চুর সিন্ডিকেটের খবরে তোলপাড়

ফসল উৎপাদনে সারের বিকল্প নেই। তবে বিকল্পহীন এই সারের বাজারে সংকট তৈরী করে যাচ্ছে একটি সিন্ডিকেট। গত ৯ অক্টোবর এই সিন্ডিকেটের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হলে তোলপাড় শুরু হয়।

প্রতিবেদনটিতে শেখ ব্রাদার্স নামক একটি সার আমদানী কারক প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার বিশ্বজিৎ সাহা ওরফে বিশু বাবু ও সার কারসাজির সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য মোবারক হোসেন বাচ্চুর মাঝে সরকারের ভর্তুকী মূল্যের আমদানীকৃত সারের চালান বিক্রির তথ্য প্রমাণ তুলে ধরা হয়। একই সাথে বন্ধ থাকা বরফকল ঘাটে ওই সার আনলোড ও দীর্ঘ ৯মাস মজুদ করে রাখার বিষয়েও তথ্য প্রমাণ উঠে আসে। ফলে এই বিষয়ে তদন্তের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি উঠেছে সচেতন মহলে।

জানা গেছে, খাদ্য-শষ্য উৎপাদনে কৃষকদের মূল ভরসা হলো ‘সার’। এই সারের বাজারেই তৈরী করা হচ্ছে কৃত্তিম সংকট। কতিপয় সার ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের পুঁজিবাদী নীতির কারণে কৃষি খাতে বিরুপ প্রভাব পড়ছে দীর্ঘদিন ধরেই। মজুদ করে রাখায় একাধারে সারের সংকট ও মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় ফসল উৎপাদন খরচ মেটাতে নাভিশ্বাস উঠছে কৃষকদের।

অন্যদিকে, সরকার ভর্তুকী মূল্যে সার সরবরাহ করলেও মিলছে না প্রতিকার। উপরন্ত কারসাজির মাধ্যমে প্রতিনিয়তই সারের বাজার নিয়ন্ত্রন করে চলেছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। এর সাথে জড়িয়ে আছে নদীবন্দর কর্তৃপক্ষ সহ ঘাট ইজারাদার মহলটিও। প্রথমিক অনুসন্ধানে এই সিন্ডিকেটের থলের বিড়াল বেড়িয়ে এসেছে।

জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ঢাকা ও আশপাশের প্রায় ২০টি জেলার জন্য জাহাজ যোগে প্রয়োজনীয় সার আসে তিনটি জায়গায়। এগুলো হলো, নারায়ণগঞ্জের লঞ্চ টার্মিনাল সংলগ্ন সার ঘাট, ফতুল্লার আলীগঞ্জ এবং অপরটি হলো নারায়ণগঞ্জের সীমানা সংলগ্ন মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুর এলাকার সার ঘাটে।

এর মধ্যে, ৫নং সার ঘাটটি ‘বিআইডব্লিউটিএ’ থেকে লিজ নিয়েছে শিবলী মাহমুদ নামে এক ব্যক্তি। নিয়মানুসারে সার ঘাটেই তা আনলোড করতে হবে। আনলোড হওয়া সার অন্তত দুই সপ্তাহের মধ্যে ডিলারদের মাঝে কিংবা বাজারে সরবরাহ করতে হবে বলেও নির্দেশনা রয়েছে।

তথ্যনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে কয়েকশত টন সার আমদানী করে শেখ ব্রাদার্স। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের ৫নং সার ঘাটে আমদানীকৃত ওই সার আনলোড করার কথা থাকলেও শেখ ব্রাদার্সের ম্যানেজার বিশ্বজিৎ ওরফে বিশু বাবু তা না করে মোবারক হোসেন বাচ্চু ও শিবলী মাহমুদের সাথে যোগসাজসে বিআইডব্লিউটিএর অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে বন্ধ ও প্রবেশাধীকার নিষিদ্ধ হওয়া বরফকল ঘাটে বিপুল পরিমান আমদানীকৃত সার আনলোড করেন। প্রায় ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে সেই বরফকল ঘাটের ইজারা বন্ধ রয়েছে।

এদিকে, আনলোড তো বটেই, পরিত্যক্ত ওই ঘাটের জায়গায় দীর্ঘ ৯ মাসেরও বেশি সময় ধরে আনলোডকৃত সার মজুদও করে রেখেছে শেখ ব্রাদার্সের ম্যানেজার বিশ্বজিৎ, সারের ব্রোকার মোবারক হোসেন বাচ্চু ও ৫নং ঘাটের ইজারাদার শিবলী মাহমুদ । ভর্তুকী মূল্যের এই সার মজুদ করে বাজারে কৃত্তিম সংকট তৈরীর মাধ্যমে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করার প্রমান মিলেছে তাদের বিরুদ্ধে।

এই বিষয়ে শেখ ব্রাদার্স এর ম্যানেজার বিশ্বজিৎ দাসের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং সদুত্তর দিতে পারেননি।

তবে জানতে চাইলে মোবারক হোসেন বাচ্চু নিজেকে শেখ ব্রাদার্স এর ঘনিষ্ঠ লোক বলে পরিচয় দেন। তিনি স্বীকার করে বলেন, ‘আমদানীকৃত সেই সার বরফকল ঘাটে ৯ মাস রাখা হয়েছিলো। ২০২৫ সালের ৩১ শে মার্চ সারগুলো সেখান থেকে সরিয়ে ফেলা হয়।’

পরিত্যাক্ত ও ইজারা নিষিদ্ধ সেই স্থানে কিভাবে মজুদ করে রাখা হলো বিপুল পরিমান এই সার? এমন প্রশ্নের জবাবে মোবারক হোসেন বাচ্চু জানান, ‘৫নং ঘাটের ইজারাদার শিবলী মাহমুদের মধ্যস্থতায় বরফকল ঘাটে ৯মাস সরকারের সেই ভর্তুকী মূল্যের সার মজুদ করে রাখা হয়েছিলো।’

এদিকে, ৫নং ঘাটের ইজারাদার হলেও পরিত্যাক্ত বরফকল ঘাটের জায়গায় কোন পক্রিয়ায় সার রাখার ব্যবস্থা করেদিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ৫নং ঘাটের ইজারাদার শিবলী মাহমুদ বলেন, ‘আসলে বিআইডব্লিউটিএর কাছ থেকে বরফকলের ওই জায়গাটি প্রথমে ৩ মাসের জন্য ভাড়া নিয়েছিলাম। সেখানে সার রাখা হয়েছিলো। পরবর্তীতে আরও তিন মাস এবং শেষে আরও তিন মাস বাড়িয়ে মোট ৯ মাস সেখানে সার মজুদ করে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছিলো।’

পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা এবং ইজারা নিষিদ্ধ এই বরফকল ঘাটের জায়গা কোন উপায়ে ৯ মাস ভাড়া দিলো বিআইডব্লিউটিএ? কোন কর্মকর্তাই বা এই ভাড়ার পক্রিয়া সম্পন্ন করেছে, এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি শিবলী মাহমুদ।

এই বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর কার্যালয়ে গেলেও কোনো কর্মকর্তার কাছ থেকে বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে তৈরী হয়েছে রহস্যের ধুম্রজাল। উঠেছে নানা প্রশ্ন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >